৮টি সেরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

আপনি কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সাথে অসাধারণ সকল, রোমান্টিক, সুন্দর সুন্দর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা শেয়ার করব। যা আপনার কাছে অনেক ভালো লাগবে বলে আমি আশা করছি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক জনপ্রিয় একজন কবি। তিনি বিশ্বকবি হিসাবেও পরিচিত। তার লেখা অনেক কবিতা রয়েছে। এসকল কবিতা সমগ্রহের মধ্যে অনেকগুলো রোমান্টিক, ভালোবাসা, প্রেমের কবিতাও আছে। আর্টিকেলটিতে এমনি সকল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা পেয়ে যাবেন। তাহলে চলুন কবিতাগুলো দেখে নেওয়া যাক। সেরা সকল কবিতাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেস্টা করব।

আরো পড়ুনঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

কবিতার নাম সহ একে এক কবিতাগুলো আপনাদের নিকট শেয়ার করা হলো। আপনি চাইলে কবিতাগুলো সিলেক্ট করে সহজেই কপি করে নিতে পারবেন।

অনন্ত প্রেম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে গে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার –
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।

যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহ মিলন কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমির রজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।

আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহ বিধুর নয়ন সলিলে, মিলন মধুর লাজে –
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।

আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে,
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি –
সকল কালের সকল কবির গীতি।

কৃষ্ণকলি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

এমনি করে কাজল কালো মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।

বাসনা বসে মন অবিরত,
ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।
স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত
জাগিছ শয়নে স্বপনে।

সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।

তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর
সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,
কাল পারাপার করিতেছ পার
কেহ নাহি জানে কেমনে।

জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি
তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যত পাই তোমায় আরো তত যাচি
যত জানি তত জানি নে।

জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন
লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর
তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই
কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে।

প্রথম চুম্বন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

স্তব্ধ হল দশ দিক নত করি আঁখি-
বন্ধ করি দিল গান যত ছিল পাখি।
শান্ত হয়ে গেল বায়ু, জলকলস্বর
মুহূর্তে থামিয়া গেল, বনের মর্মর
বনের মর্মের মাঝে মিলাইল ধীরে।
নিস্তরঙ্গ তটিনীর জনশূন্য তীরে
নিঃশব্দে নামিল আসি সায়াহ্নচ্ছায়ায়
নিস্তব্ধ গগনপ্রান্ত নির্বাক্ ধরায়।
সেইক্ষণে বাতায়নে নীরব নির্জন
আমাদের দুজনের প্রথম চুম্বন।
দিক্-দিগন্তরে বাজি উঠিল তখনি
দেবালয়ে আরতির শঙ্খঘণ্টাধ্বনি।
অনন্ত নক্ষত্রলোক উঠিল শিহরি,
আমাদের চক্ষে এল অশ্রুজল ভরি।

আরো পড়ুনঃ

মিলন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি কেমন করিয়া জানাব আমার
জুড়ালো হৃদয় জুড়ালো — আমার
জুড়ালো হৃদয় প্রভাতে।
আমি কেমন করিয়া জানাব আমার
পরান কী নিধি কুড়ালো — ডুবিয়া
নিবিড় নীরব শোভাতে।
আজ গিয়েছি সবার মাঝারে, সেথায়
দেখেছি একেলা আলোকে — দেখেছি
আমার হৃদয়-রাজারে।
আমি দু-একটি কথা কয়েছি তা-সনে
সে নীরব সভা-মাঝারে — দেখেছি
চিরজনমের রাজারে।

ওগো, সে কি মোরে শুধু দেখেছিল চেয়ে
অথবা জুড়ালো পরশে — তাহার
কমলকরের পরশে —
আমি সে কথা সকলি গিয়েছি যে ভুলে
ভুলেছি পরম হরষে।
আমি জানি না কী হল, শুধু এই জানি
চোখে মোর সুখ মাখালো — কে যেন
সুখ-অঞ্জন মাখালো —
কার আঁখিভরা হাসি উঠিল প্রকাশি
যে দিকেই আঁখি তাকালো।

আজ মনে হল কারে পেয়েছি — কারে যে
পেয়েছি সে কথা জানি না।
আজ কী লাগি উঠিছে কাঁপিয়া কাঁপিয়া
সারা আকাশের আঙিনা — কিসে যে
পুরেছে শূন্য জানি না।
এই বাতাস আমারে হৃদয়ে লয়েছে,
আলোক আমার তনুতে — কেমনে
মিলে গেছে মোর তনুতে।
তাই এ গগনভরা প্রভাত পশিল
আমার অণুতে অণুতে।
আজ ত্রিভুবন-জোড়া কাহার বক্ষে
দেহ মন মোর ফুরালো — যেন রে
নিঃশেষে আজি ফুরালো।
আজ যেখানে যা হেরি সকলেরি মাঝে
জুড়ালো জীবন জুড়ালো — আমার
আদি ও অন্ত জুড়ালো।

হঠাৎ দেখা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
দালিম ফুলের মতো রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।

থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু –
কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার
ইত্যাদি।

সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় –
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।

আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে
ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়;
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?
আমি বললেম, বলব।
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি।

একটুকু রইলেম চুপ করে;
তারপর বললেম,
রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, থাক্‌, এখন যাও ও দিকে।
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে;
আমি চললেম একা।

আহা আজি এই বসন্তে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,
সখীর হৃদয় কুসুম কোমল –
কার অনাদরে আজি ঝরে যায়!
কেন কাছে আস, কেন মিছে হাস,
কাছে যে আসিত সে তো আসিতে না চায়।
সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা,
সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা –
দুখিনী নারীর নয়নের নীর
সুখী জনে যেন দেখিতে না পায়।
তারা দেখেও দেখে না, তারা বুঝেও বুঝে না,
তারা ফিরেও না চায়।

আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু,
নয় তো হীনবল-
শুধু কি এ ব্যাকুল হয়ে
ফেলবে অশ্রুজল।
মন্দমধুর সুখে শোভায়
প্রেম কে কেন ঘুমে ডোবায়।
তোমার সাথে জাগতে সে চায়
আনন্দে পাগল।

নাচ যখন ভীষণ সাজে
তীব্র তালের আঘাত বাজে,
পালায় ত্রাসে পালায় লাজে
সন্দেহ বিহবল।
সেই প্রচন্ড মনোহরে
প্রেম যেন মোর বরণ করে,
ক্ষুদ্র আশার স্বর্গ তাহার
দিক সে রসাতল।

উপসংহার

আশা করছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে সেই সম্পর্কে মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। সেরা সকল বাছাই করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা আর্টিকেলটিতে শেয়ার করার চেস্টা করেছি।

নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে। এতক্ষণ আমাদের সাথে যুক্ত থেকে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Leave a Comment